শেখ হাসিনার বিজয় নিয়ে যা বললো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৮ আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭, জাতীয় পার্টি ২২, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ও বিকল্পধারা দুটি করে আসন পেয়েছে। জেপি (মঞ্জু) পেয়েছে একটি আসন।

চারটি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে তাদের তিনজনই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। এর মধ্যে বিএনপি পাঁচটি ও গণফোরামের দুটি আসন রয়েছে।

অনেক দিক থেকেই এই নির্বাচন ছিল যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। তার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো বিশাল জয় পেলো মহাজোট। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে সে খবর ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়, প্রধান বিরোধীদল বিএনপি গত নির্বাচন বয়কট করেছিল। বিগত দশ বছরে এবারই প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সংবিধান প্রণেতা কামাল হোসেন বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন শরিকরা ২৮১টি আসনে জয় পেয়েছে। বিবিসির সংবাদটির শিরোনামে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ইলেকশন: শেখ হাসিনা উইনস নিউ টার্ম এজ প্রাইম মিনিস্টার’।

আল-জাজিরার সংবাদে সংক্ষেপে প্রথমেই জানানো হয়, কমিশনের ঘোষণায় মোটা দাগে জয় পেয়েছে শেখ হাসিনার আ.লীগ। তবে নির্বাচনকে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা।

তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। আল-জাজিরায় প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনামে উল্লেখ ছিল, ‘হাসিনা উইনস বাংলাদেশ ইলেকশনস এজ অপজিশন রিজেক্টস পোলস’।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট খুব সহজেই সরকার গঠনে নূন্যতম ১৫০টি আসন পেয়েছে। তবে নির্বাচনের ফল মেনে নেয়নি বিরোধীরা। নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় সারাদেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদটির শিরোনাম করা হয়, ‘ল্যান্ডস্লাইড উইন ফর শেখ হাসিনা ইন বাংলাদেশ, অপজিশন সিকস নিউ ভোট’। কলকাতার জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার বাংলাদেশের ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিক জানাতে ‘লাইভ আপডেট’ অপশন চালু করেছে।

সংবাদে বলা হয়, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে তা অনেকের ধারণা থাকলেও এত বড় ব্যবধানে জিতবে তা হয়তো স্বয়ং শেখ হাসিনাও ভাবতে পারেননি। আওয়ামী লীগের বিপুল জয়ে মুছে গেল বিরোধীরা। সংবাদটির নাটকীয় শিরোনাম ছিলো, ”অবিশ্বাস্য’, আওয়ামি প্লাবনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিএনপি-জামাত জোট, বাংলাদেশে ইতিহাস’ মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’র সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

তবে বিরোধীরা ফল মেনে নেয়নি। দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে ভূমিকা মূলত হাসিনার জয়ের কারণ। তবে মানাবাধিকার লঙ্ঘনে তার সরকারের সমালোচনা রয়েছে। খবরের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ প্রাইম মিনিস্টার উইনস থার্ড টার্ম এমিড ডেডলি ভায়োলেন্স অন ইলেকশন ডে’।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন জানায়, সুষ্ঠু নিরাপত্তার জন্য সারাদেশে ৬ লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তবু নির্বাচনে ১৭ জনের প্রাণহানি হয়।

নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, সরকার গঠন করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। তবে বিরোধীদল নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন চেয়েছে।এছাড়া, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স, সিএনএন, সিনহুয়া, গালফ নিউজ, টেলিগ্রাফসহ বহির্বিশ্বের স্বনামধন্য গণমাধ্যমগুলো।